বাংলাদেশ থেকে আবারো পোশাক কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনপ্রিয় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানি। দীর্ঘ ৮ বছর পর বর্তমানে আন্তর্জাতিক শ্রম মান নিরীক্ষা বিবেচনায় নিয়ে সংস্থাটি তার অনুমোদিত সোর্সিং দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করছে। রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর যুক্তরাষ্ট্রের এই ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে তাদের ব্যবসা সরিয়ে নিয়েছিল।
তবে বাংলাদেশ থেকে আবারও পোশাক কেনার বিষয়টি ওয়াল্ট ডিজনি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে না বললেও শুক্রবার (২ জুলাই) বিকেলে নিশ্চিত করেছেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি জানান, ওয়াল্ট ডিজনির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাঁকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আন্তর্জাতিক শ্রমমান নিরীক্ষা বিবেচনায় নিয়ে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি তার অনুমোদিত সোর্সিং দেশের তালিকায় আবার বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানি যেসব দেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করে, বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল। কিন্তু তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড এবং রাসা প্লাজা ধসের ঘটনার পর ২০১৩ সালে ওয়াল্ট ডিজনি বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনা বন্ধ করে দিয়েছিল।
কয়েক বছর আগের এসব ঘটনার পর থেকেই দেশের কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে সরকার, কারখানা মালিক ও আন্তর্জাতিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে। ফলে গত কয়েক বছরে কারখানার কর্মপরিবেশ ও অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
হংকংভিত্তিক সাপ্লাই চেইন কমপ্লায়েন্স সল্যুশনস প্রোভাইডার, “কিউআইএমএ” তার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইথিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারিং দেশ হিসেবে স্থান দিয়েছে। এই রেটিং-এ স্বাস্থ্যবিধি, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা, শিশু ও তরুন শ্রমিক, বাধ্যতামূলক শ্রমসহ শ্রম বিষয়ক চর্চাগুলো, শ্রমিক প্রতিনিধিত্ব, শৃঙ্খলাবদ্ধ অনুশীলন এবং বৈষম্য, কর্ম ঘন্টা ও মজুরি এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো প্যারামিটারগুলো অন্তর্ভূক্ত করেছিলো। সমীক্ষাটি এমন সময়ে পরিচালিত হয়েছিলো, যখন কোভিড বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন শিল্প ও সরবরাহ চেইনকে ব্যাহত করেছিলো। এ সময়ে এভাবে কমপ্লায়েন্স প্রতিপালন শিল্পের সকল পরিস্থিতিতে দৃঢ়তা ধরে রাখা আর প্রতিশ্রুতির কথাই বলেছে, যা সমীক্ষায় উঠে এসেছে।
এছাড়াও, ক্লিনার ও সবুজায়ন উৎপাদন ক্ষেত্রগুলোতে যে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, তা টেকসই সরবারহ চেইন তৈরির দিকে শিল্পের প্রতিশ্রুতি ও কর্মের সাক্ষ্য দেয়। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি লীড গ্রীণ কারখানার অবস্থান বাংলাদেশেই। ১৪৪টি লীড গ্রীন কারখানা ইউএসজিবিসি থেকে সনদপ্রাপ্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৪১টি প্লাটিনাম। বিগত দশকে অক্লান্ত প্রচেষ্টা আর উদ্যোগে দেশটি বৈশ্বিক ব্র্যান্ড আর ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করেছে। বিশ্বে বিজিএমইএ একমাত্র সংগঠন, যে সংগঠনটি কিনা পোশাক শিল্পে পরিবেশগত টেকসই উন্নয়ন এবং সবুজ শিল্পয়নে অনুকরনীয় নেতৃত্ব দেয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ এই সম্মাননায় ভূষিত হয়েছে।
ওয়াল্ট ডিজনি/বিজিএমইএ/বসন টিভি