নারী তাঁতি পাতানী বেগমের সংগ্রামী জীবন

অন্যান্য ইন্টারভিউ
টিনের একটি ঘর। ঘরের সামনে ছোট্ট বারান্দা। মাটির মেঝে। ঘরের এক পাশে বসানো একটি তাঁত,আরেক পাশে থাকার ব্যবস্থা । দশ বছর ধরে সেই তাঁতে শাড়ী বুনছেন মাঝবয়সী পাতানী বেগম।
পাতানী বেগমের ঘরের মধ্য দেখা যাবে বুননের এ দৃশ্য। পাতানী বেগমের অবস্থান সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলা শহর থেকে কৈজুরি ইউনিয়নের যমুনা নদীর তীরবর্তী ভাটপাড়া বাঁধের পূব পাশে জেলহকের স্ত্রী পাতানী বেগম। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রীর স্লিপ বিতরণ করতে গিয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে মামুন বিশ্বাসের।
এক ছেলে, তিন মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে পাতানী বেগমের সংসার। ভুমিহীন অন্য জায়গায়তে তাদের বসবাস।
স্বামী জেলহক মহাজনের বাড়িতে তাঁতের কাজ করেন। সেই মজাজন খোকনে দেওয়া তাঁত নিজের বাড়িতে বসিয়ে ১০ বছর ধরে কাজ করছে পাতানী বেগম। সুতা থেকে সব কিছু কিনে দেন মহাজন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পযন্ত পাতানী বেগম তিন থেকে চারটি কাপড় তৈরি করতে পারেন। প্রতি সপ্তাহে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হয়।
পাতানী বেগম তার কষ্টের কথা জানান দশ বছর আগের ঘটনা ছোট ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে অভাবে পড়ে যান। তখন স্বামী ও ঠিক মত কাজ করতো না। অভাবে কারনে স্বামী চলে যায়। সন্তানদের নিয়ে না খেয়েও থাকতে হয় পাতানী বেগম কে। চলে যান বড় বোনের বাড়িতে। বড় বোন জামাই তার বাড়িতে ৮ দিন তাঁত বুননের কাজ শিখিয়ে দেন। সেখান থেকেই শুরু পাতানী বেগমের তাঁত বুননের কাজ। এলাকায় কিছুদিন মহাজনের বাড়িতে তাঁতের কাজ করেন। মানুষ নানান কথা বলতে থাকে। পাতানী বেগম মহাজনের সাথে কথা বলে একটি তাঁত তার বাড়িতে নিয়ে আসেন। চলতে থাকে তার সংগ্রামী জীবন, এর মধ্য স্বামী ও ফিরে আসে। স্বামী-স্ত্রী দু’জনে মিলেই বুনন শাড়ী ।
তিনি আরো জানান, যদি নিজের একটা তাঁত ও কিছু পুজি থাকতো তাইলে সংসার আরো একটু ভাল ভাবে চালাতে পারতাম।
তার ছেলে নয়ন (১৬) কাজ করেন রাজমিস্ত্রীর হেল্পার হিসেবে । আর বড় মেয়ে সুমি (১৩) ও উমি সুতা চরকায় পেঁচানো কাজে সাহায্য করেন। সুমনা (৭)
তাঁত শিল্প সিরাজগঞ্জের একটি ঐতিহ্য । এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে প্রয়োজন সরকারের পাশাপাশি এ শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে আসা।
সূত্র: দৈনিক সংগ্রাম
শেয়ার করুন