শতভাগ কারখানা বেতন-বোনাস বুধবারের মধ্যে পরিশোধ করা হবে বলে জানিয়েছে এ খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এছাড়া মঙ্গলবার পর্যন্ত ৯৭ শতাংশ সদস্য কারখানা পোশাক শ্রমিকের বেতন এবং ৯৯ শতাংশ কারখানা বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান এ তথ্য জানান।
বুধবার (১২ মে) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিজিএমইএ’র কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। এসময় ফারুক হাসান জানান, তারা আশা করছেন (১২ মে) বুধবারের মধ্যে শতভাগ কারখানায় বেতন-বোনাস দেয়া সম্ভব হবে। তিনি জানান, ৬৮টি কারখানায় নিবিড় তদারকির মাধ্যমে পাওনা পরিশোধ নিশ্চিত করা হয়েছে।
অবশ্য সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার বলেন, বিজিএমইএর এ বক্তব্য সঠিক নয়। চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার অনেক কারখানা পাওনা পরিশোধ না করে কারখানা বন্ধ করেছে। তবে কতটি কারখানা বা সেগুলো কোনো সংঠনের সদস্য কি-না এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেননি তিনি।
এদিকে ঈদের আগে শ্রমিকদের ছুটি ইস্যুতে সৃষ্ট অসন্তোষকে দুঃখজনক আখ্যায়িত করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, করোনা সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য সরকারের নির্দেশনা মেনে আমরা তিনদিনের ছুটি দিয়েছিলাম। কিন্তু কিছু কারখানায় অসন্তোষ হয়েছে। এ সময় শ্রম আইনে ছুটি সংক্রান্ত বিধান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছুটি কম দেওয়া হয়নি, বরং সমন্বয় করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে আলোচনার মাধ্যমে বেশি ছুটি দেওয়া হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে ছুটি সংক্রান্ত বিরোধ এড়িয়ে চলতে তিনি অনুরোধ জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে পোশাক খাতের বিদ্যমান সংকট তুলে ধরে বলেন, কারখানাগুলো বর্তমানে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে রয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করেছে। এখন ব্যয়ের চেয়েও কম মূল্যে ক্রয়াদেশ নিতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে নীতি সহায়তা চান বিজিএমইএ সভাপতি।
বেতন বোনাসের বিস্তারিত তথ্যে সংগঠনটি জানায়, বর্তমানে বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত মোট সচল কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৯শ’ ১৩টি। এরমধ্যে ১ হাজার ৮৬৬টি কারখানায় এপ্রিল মাসের বেতন এবং ১ হাজার ৮৮২টি কারখানায় ঈদের বোনাস দেয়া হয়েছে।
বেতন আর উৎসব ভাতা নিয়ে সমস্যা হতে পারে এমন ৮শ’টি কারখানাকে গভীর নজরদারিতে রাখা হয়েছিল বলেও জানান বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
পোশাক শিল্প বর্তমানে কঠিন সময় পার করছে উল্লেখ করে ফারুক হাসান বলেন, আগামী ৩ মাস এই খাতকে আরও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। আগামী অক্টোবর থেকে এ খাত ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশার কথা জানান তিনি।
এসময়, শ্রমিকদের ছুটি ও ছুটি কাটানো নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারি নিয়মে ঈদের ছুটি তিনদিন। তবে, শ্রমিক-মালিকের বোঝাপোড়ার ভিত্তিতে এই ছুটি বাড়ানো যেতে পারে। যা সচারচর করা হয়। তবে, করোনাকালে স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলা করে জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে শ্রমিকদের কর্মস্থলের কাছাকাছিই ঈদ উৎসব উদযাপন করার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ২ বছর ১৮ কিস্তির পরিবর্তে ৩ বছরে ৩০ কিস্তিতে শোধ করার সুযোগ দেয়ার অনুরোধ করে বিজিএমইএ।
এসময়, আসছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে পোশাক খাতের অনুকূলে বেশকিছু দাবি তুলে ধরা হয়।
রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য রফতানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎস কর দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে তা দশমিক দুই পাঁচ শতাংশ করা ও তা আগামী ৫ বছর পর্যন্ত কার্যকর রাখার দাবি জানানো হয়। এখাতের করপোরেট করহার সবুজ কারখানার জন্য ১০ শতাংশ ও অন্যান্য কারখানার জন্য ১২ শতাংশ আগামী ৫ বছর পর্যন্ত বলবৎ রাখার অনুরোধ জানায় সংগঠনটি। এছাড়া, নগদ সহায়তার ওপর আয়কর কর্তনের হার ১০ শতাংশ থেকে শূন্যে নামিয়ে আনার দাবি তুলে ধরেন বিজিএমইএ সভাপতি।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এস এম মান্নান কচি, সহসভাপতি শহীদুল্লাহ, আজিম, পরিচালক ভিদিয়া অমৃত খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
1 thought on “প্রায় শতভাগ কারখানায় বেতন-বোনাস পরিশোধ, বিজিএমইএ’র সংবাদ সম্মেলন”
Comments are closed.