দেশের তৈরি পোশাক পণ্য প্রস্তুতকারকদের সুতা ও কাপড়ের মতো কাঁচামাল সরবরাহ করেন বস্ত্র শিল্পোদ্যেক্তারা। মূল এলসি বা ঋণপত্রের বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক এলসি বা ঋণপত্র ব্যবহার করে প্রচ্ছন্ন এ রফতানি করে থাকেন সুতা ও কাপড়ের মিল মালিকরা। কিন্তু কভিড-১৯-এর প্রভাবে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে অর্থ পরিশোধে বিলম্ব করছে। এতে বিপাকে রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বস্ত্র শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) একটি সূত্র বলছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ব্যবসা বড় হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বৈদেশিক লেনদেনের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। আমদানি-রফতানি লেনদেনের ক্ষেত্রে তাত্ক্ষণিকভাবে ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে পণ্যের মূল্য পরিশোধের পদ্ধতিটি তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু কভিডের প্রভাবে এ পদ্ধতিতে মূল্য পরিশোধে বিলম্ব করছে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো, যা মিলের উৎপাদনকেও ব্যাহত করছে।
সম্প্রতি গণমাধ্যমকে পাঠানো এক চিঠিতে বিটিএমএ জানিয়েছে, আমদানি-রফতানি কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনায় কার্যকর একটি মাধ্যম হলো ব্যাক টু ব্যাক এলসি। কিন্তু এর মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ নিয়ে মিল মালিকরা দীর্ঘদিন ধরে সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। বর্তমান অতিমারীর সময় ব্যাক টু ব্যাক এলসির সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। নির্ধারিত তারিখ শেষেও ব্যাংক এলসি পেমেন্ট পরিশোধ করছে না।
বিটিএমএর তথ্যমতে, করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় আনুমানিক ২০ কোটি ডলার এলসি পেমেন্ট অপরিশোধিত ছিল। সংগঠনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে বিষয়টি জানানোর পর ব্যাংক এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিটিএমএকে জানানো হয়, আটকে পড়া অর্থ যত দ্রুত সম্ভব পরিশোধের ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু এর পরও সমস্যার সমাধান হয়নি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ও কয়েকটি ব্যাংক এলসির অর্থ পরিশোধ করতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে।
এমন অবস্থার মধ্যেই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিটিএমএর সদস্যদের সুতা ও ফ্যাব্রিকের ওপর ২০ থেকে ১৫০ ডলার চার্জ ধার্য করেছে। এ ধরনের আচরণ ব্যবসায়ীদের জন্য হতাশাজনক ও আগ্রহ হারিয়ে ফেলার জন্য যথেষ্ট বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংকই নির্ধারিত তারিখের পরও এলসির অর্থ পরিশোধ করছে না। ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে এ ধরনের অসহযোগিতামূলক আচরণ মোটেও প্রত্যাশিত নয় বলে মনে করে বিটিএমএ। বিশেষ করে কভিডের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের প্রভাবে যখন অনেক প্রতিষ্ঠানই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে যাচ্ছে। এর ফলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে ও সঠিক সময়ে ক্রেতাদের পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে অনেক কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। চলমান সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানিয়েছে বস্ত্র শিল্প মালিকদের সংগঠনটি।
সূত্র: বণিক বার্তা