আন্তর্জাতিক শিক্ষার মানদণ্ডে এগিয়ে নিটার

ক্যাম্পাস

দেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিটার আন্তর্জাতিক শিক্ষার মানদণ্ডে এগিয়ে।

বাংলাদেশের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র একজন। অথচ ১০-২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষককে মানসম্মত ধরা হয়।

আন্তর্জাতিক শিক্ষার মানদণ্ডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া নেই স্বায়ত্তশাসিত কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। আন্তর্জাতিক শিক্ষার মানদণ্ডে ১০-২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন শিক্ষক থাকা কে মানসম্মত ধরা হয়। সেখানে বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই মানদণ্ড স্পর্শ করতে সক্ষম হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে ১ জন শিক্ষক অন্য দিকে বাকি তিনটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় নেই এই মানদণ্ডে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২২ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে ১ জন করে শিক্ষক। স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সব থেকে পিছিয়ে রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ৩৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে মাত্র ১ জন শিক্ষক।

দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৬ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার মানদণ্ডের ধারে কাছেও নেই। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে ১ জন শিক্ষক, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে ১ জন শিক্ষক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪১ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে ১ জন শিক্ষক, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে ১ জন শিক্ষক, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থা সব থেকে ভয়াবহ এখানে রয়েছে ৫৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ১ জন শিক্ষক যেই অনুপাত আন্তর্জাতিক শিক্ষার মানদণ্ডের ধারে কাছেও নেই। (তথ্য সংগ্রহ: সময় টিভি)

অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাদানকল্প শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ❝ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড রিসার্চ – নিটার❞ ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে মাত্র ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ৬৮৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে মাত্র দশ (১০) বছরে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা অর্জন করেছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পুরস্কার।

নিটারে ব্যাচেলর পর্যায়ের পাঁচটি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট এর অধীনে শিক্ষার্থী রয়েছে মোট ১৭২৩ জন এবং শিক্ষক রয়েছে ৮৩ জন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অনুপাত দাড়ায় ১ঃ২০ অর্থাৎ ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে ১ জন শিক্ষক। যেই অনুপাত টা আন্তর্জাতিক শিক্ষার মানদণ্ডের মধ্যে রয়েছে এমন কি স্বায়ত্তশাসিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকি তিনটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় সহ অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে এগিয়ে রয়েছে।

শিক্ষার মানের দিক থেকে স্বায়ত্তশাসিত তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় সহ অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে নিটারের শিক্ষামান এগিয়ে থাকলেও প্রতিষ্ঠান টি দীর্ঘদিন ধরে আলোর মুখ দেখতে পাচ্ছে না।

ইঞ্জিনিয়ার জনাব মোজাফফর হোসেন (এমপি, জামালপুর-৫ আসন) একটি অনুষ্ঠানে বলেন আমি দেখেছি নিটারের যে পরিস্থিতি আমি সন্দেহাধীন! ❝বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় – বুটেক্স কে পা দিয়ে নিটার চলে যায় কিনা আমার সন্দেহ আছে❞, তাদের লেখাপড়া তাদের শিক্ষকদের যে এটেনডেন্স, তাদের যে সিস্টেম, ছাত্রদের যে এটেনডেন্স সব টেকনিক্যাল টার্ম ইউজ হচ্ছে।

এছাড়াও মার্চ ১০, ২০১৯ সালে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জনাব গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক) নিটারের নবীনবরনে এসে বলেন নিটার হলো দক্ষ কারিগর তৈরীর কারখানা, ❝নিটার কে পূনাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য যা যা করা দরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে❞, মন্ত্রী মহোদয়ের এই কথার আজ প্রায় তিন (০৩) বছর হতে চললেও নেই কোন অগ্রগতি।

নিটার ঢাকা বিভাগের ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন ঢাকা রপ্তানী ও প্রক্রিয়াজাতকরণ (ডিইপিজেড) অঞ্চলে অবস্থান করায় ভৌগোলিক এবং পরিবেশগত দিক দিয়ে ঢাকার বাইরের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে শিক্ষার মানে এগিয়ে রয়েছে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপের অধীনে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিটার, তবুও এখানে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নেই কোন সুনজর। নিটারের শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারী সকলের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি নিটার কে বিশেষায়িত পাবলিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখার।

এমতাবস্থায় আমরা নিটারের সকল স্টুডেন্ট, শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আপার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই নিটার কে বিশেষায়িত পাবলিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে প্রকৌশল শিক্ষা বাংলাদেশের জনগণের জন্য আরো সহজ করে দিন।

লিখেছেন:
রুবেল আকন্দ, শিক্ষার্থী, নিটার, সাভার, ঢাকা।

শেয়ার করুন