পোশাক খাতে পরতে পারে বৈশ্বিক অর্থনীতির নেতিবাচক প্রভাব

প্রতিবেদন

করোনা মহামারিতে দুই বছর বড় ধরনের ধাক্কা লাগে বিশ্ব অর্থনীতিতে। বেশিরভাগ দেশের অর্থনীতিই হয়েছিল সঙ্কুচিত। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছিল। তবে এরপর ধীরে ধীরে তা ঘুরে দাঁড়াতে থাকে। ঠিক তখনই আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বিশ্বের অর্থনীতিকে আবারও টালমাটাল।

সরাসরি যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের পোশাক খাতে। বাংলাদেশের পোশাক খাতের বড় বাজার ইউরোপজুড়ে ব্যাপক মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি সঙ্কটের পাশাপাশি মানুষের ব্যয় হ্রাস পেয়েছে উল্লেখযোগ্যহারে। এরই মধ্যে ইউরোপের বাজারে ২০ শতাংশ পোশাক পণ্যের আদেশ কমে গেছে। বাংলাদেশে মোট পোশাক রফতানির ৫৬ শতাংশ যায় ইউরোপের দেশে। যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদী হলে পোশাক খাতে সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে মত খাত সংশ্লিষ্টদের। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইউক্রেন-রাশিয়া চলমান যুদ্ধের কারণে সামনের দিনে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটা মন্দাভাব আসতে পারে। বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে। এতে করে বাংলাদেশের রফতানি খাতে আবারও কালো মেঘ দেখছেন তারা।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রকাশিত আইএমএফের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি ২০২২ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ৩ দশমিক ২ শতাংশ আর ২০২৩ সালে ২ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২০ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকোচনের পর ২০২১ সালে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছিল ৬ দশমিক ১ শতাংশ। আইএমএফ এর আগে পূর্বাভাস দিয়েছিল, ২০২২ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি প্রাক্‌-মহামারি পর্যায়ে ফেরত যাবে। কিন্তু তাদের গতকালের যা পূর্বাভাস, তাতে এ বছর প্রাক্‌-মহামারি পর্যায়ে ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনা কম।

অর্থনীতির এই বিষণ্ন ও অনিশ্চিত চিত্রের কারণ খুঁজেছে আইএমএফ। এবারের পূর্বাভাসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়টি বারবার উঠে এসেছে। যুদ্ধের কারণে জ্বালানি ও খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি সরবরাহব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, বিশেষ করে মূল্যস্ফীতিতে। সেটাই সবচেয়ে ভীতির কারণ। প্রতিবেদনে এ বছর মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস বৃদ্ধি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, উন্নত দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতির গড় হার দাঁড়াতে পারে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ আর উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ, অর্থাৎ গত এপ্রিল মাসের তুলনায় মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস শূন্য দশমিক ৯ ও শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

আর এই মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেভাবে পাইকারি হারে নীতি সুদহার বৃদ্ধি করছে, তাতে ২০২৩ সালে তার প্রভাব টের পাওয়া যাবে বলে মনে করছে আইএমএফ। সে জন্য তাদের পূর্বাভাস, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ২ দশমিক ৯ শতাংশ।

আইএমএফের এই প্রতিবেদনে নানা অনিশ্চয়তার কথা বলা হয়েছে। আইএমএফ বলছে, অর্থনীতির পথ বন্ধুর। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের যে গতি-প্রকৃতি, তাতে রাশিয়া যেকোনো সময় ইউরোপের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে ইউরোপের দুর্গতির অন্ত থাকবে না। অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে যেভাবে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন গতি পাচ্ছে, তাতে মূল্যস্ফীতি লাগাম ছাড়া হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। আবার চীনের বিভিন্ন স্থানে এখনো কোভিডের প্রকোপ মোকাবিলায় লকডাউন আরোপ করা হচ্ছে। ফলে সরবরাহব্যবস্থা ও বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। সম্ভাব্য এসব ঝুঁকি বাস্তব হয়ে উঠলে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার আরও হ্রাসের আশঙ্কা আছে। এই পরিস্থিতিতে ২০২২ ও ’২৩ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার কমে ২ দশমিক ৬ ও ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে—এমন শঙ্কার কথাও জানিয়েছে আইএমএফ।

ইনকিলাব/প্রথম আলো/বসন টিভি

শেয়ার করুন