বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় | বুটেক্স

ইন্টারভিউ ক্যাম্পাস ক্যারিয়ার
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, সংক্ষেপে যা ‘বুটেক্স’ (ইংরেজি: BUTEX) নামে অধিক পরিচিত, বাংলাদেশের প্রকৌশল শিক্ষায় একটি বিশেষায়িত এবং শীর্ষস্থানীয় গবেষণাধর্মী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়টির একমাত্র ক্যাম্পাস রাজধানী শহর ঢাকার উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত। এটি বস্ত্রকৌশল শিক্ষায় দেশের প্রথম ও একমাত্র সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। উৎপাদনকেন্দ্রিক গবেষণা ও শিল্পায়নমুখী পাঠদান প্রতিষ্ঠানটিকে বরাবরই অন্যান্যদের মাঝে আলাদা করে তুলে ধরে।

ইতিহাস

১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনামলে ‘ব্রিটিশ স্কুল অব উইভিং’ নামে ঢাকার নারিন্দায় এই প্রতিষ্ঠানটি চালু হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৩৫ সালে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘পূর্ব বাংলা টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট’।
ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনামলের অবসান পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান সরকারের হাতে নববিভক্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান রাষ্ট্রের ক্ষমতা যাওয়ার পর ১৯৫০ সালে এই প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট’৷ এর কিছুকাল পর ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বর্তমান ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা হয়৷
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম পরবর্তী সময়ে ১৯৭৮ সালে এই প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারের পক্ষ থেকে কলেজে (মহাবিদ্যালয়) রূপান্তর করা হয়; নতুন করে নামকরণ করা হয় ‘বস্ত্রকৌশল ও প্রযুক্তি মহাবিদ্যালয়’ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করে এখানে চার বছর মেয়াদী ব্যাচেলর ইন সায়েন্স (বি.এসসি.) ডিগ্রী কোর্স চালু করা হয়।
বাংলাদেশের চলমান অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের গুরুত্ব বিবেচনা করে তৎকালীন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের উদ্যোগে ২০১০ সালে বস্ত্রকৌশল শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার প্রস্তাব করা হলে বিলটি জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। মহামান্য রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের মাধ্যমে ২০১০ সালের ৫ই অক্টোবর ‘বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় বিল’ চূড়ান্তভাবে পাস হয়, যা ২২ ডিসেম্বর, ২০১০ থেকে কার্যকর হয়। এ জন্য প্রতি বছর ২২শে ডিসেম্বর দিনটিকে ‘টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। ২০১১ সালের ১৫ই মার্চ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়’ তথা ‘বুটেক্স’ -এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।[২] বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বমানের চৌকস বস্ত্র প্রকৌশলী গড়ে তুলে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অগ্রগতিতে অবিরত অসামান্য ভূমিকা রেখে চলেছে।
শিক্ষা কার্যক্রম
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর অব্দি, বুটেক্সে পাঁচটি অনুষদের অধীনে দশটি বিষয়ের ওপর বি.এসসি. ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু রয়েছে, যা সর্বমোট ৮ সিমেস্টারে বিভক্ত৷ প্রতিবছর ৬ মাস অন্তর ২টি সিমেস্টার অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত বছরগুলোকে লেভেল এবং সিমেস্টার গুলোকে টার্ম বলা হয়; অর্থাৎ ৪টি লেভেল-এ ৮টি টার্ম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চালু থাকা অনুষদ এবং অধীনস্থ বিভাগ সমূহের নাম নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
  •  বস্ত্র উৎপাদন প্রযুক্তি অনুষদ                                                    
  1.  তন্তুকৌশল বিভাগ
  2. বুননকৌশল বিভাগ
  • বস্ত্র কেমিকৌশল অনুষদ
  1. সীক্তকৌশল বিভাগ
  2. ডাই ও কেমিকৌশল বিভাগ
  3. পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ
  •  ফ্যাশন ডিজাইন ও বয়নকৌশল অনুষদ
  1. বয়নকৌশল বিভাগ
  2. ফ্যাশন ডিজাইনিং বিভাগ
  • পোশাকশিল্প ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ
  1. বস্ত্রকৌশল ব্যবস্থাপনা বিভাগ
  2. শিল্পোৎপাদন প্রকৌশল বিভাগ
  • বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদ
  1. বস্ত্রকৌশল যন্ত্রাদি নকশা ও প্রস্তুত বিভাগ
  2. পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ
  3. রসায়ন বিভাগ
  4. গণিত ও পরিসংখ্যান বিভাগ
  5. মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগ
 
এছাড়াও বুটেক্সের অধীনে সাতটি বস্ত্রকৌশল মহাবিদ্যালয় (কলেজ) রয়েছে যেগুলো চার বছর মেয়াদি বি.এসসি. ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি প্রদান করে থাকে। প্রতিটি কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম বুটেক্সের সিলেবাস অনুযায়ী পরিচালিত হয় এবং পাশের সনদপত্র বুটেক্স কর্তৃক প্রদান করা হয়। কলেজগুলো সম্পূর্ণরূপে বুটেক্স নিয়ন্ত্রিত।

প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণ

তেঁজগাও শিল্পাঞ্চল এলাকার সাতরাস্তার কোলঘেঁষে বুটেক্সের অবস্থান। শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশের শুরুতেই চোখে পড়বে আধুনিক নকশার মূল ফটক ও অভ্যর্থনা তোরণ।
বুটেক্সে সকল শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয় তার মূল শিক্ষা ভবন থেকে। সেখানে রয়েছে উন্নত মানের সকল শিক্ষা উপকরণ ও সবধরনের সুযোগ সুবিধা। থাম্ব|একাডেমিক বিল্ডিং বুটেক্সের কার্যক্রমকে আরো বেগবান এবং যুগোপযোগী করতে এর ক্যাম্পাসে রয়েছে ১৩ তলা বিশিষ্ট ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ভবন’। ভবনটি শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানের শিখন পরিবেশ ও সুযোগ সুবিধা প্রদান করবে। থাম্ব|বঙ্গবন্ধু একাডেমিক ভবন ক্যাম্পাস চত্বরে বুটেক্সের রয়েছে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ থাম্ব|কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ এছাড়াও রয়েছে থাম্ব|শহীদ মিনার থাম্ব|বুটেক্স ছাত্র সংসদ থাম্ব|ফোয়ারা থাম্ব|কোরিডোর বুটেক্সের শিক্ষাঙ্গনটি দেখতে দেখায় যেন বিচিত্র রঙে বর্ণিল একটি প্রজাপতির ডানার মতো। অঙ্গনজুড়ে দেয়ালে দেয়ালে ও প্রায় প্রতিটি কোণে চোখে পড়বে সুচারুভাবে অঙ্কিত অসংখ্য গ্রাফিতি, রূপকী দেয়ালচিত্র এবং চিরায়ত চিত্রকর্ম।

ক্যাম্পাস জীবন-সহশিক্ষা কার্যক্রম

শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে গঠিত একাধিক ছাত্রসংগঠন বুটেক্স প্রাঙ্গণ জুড়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে থাকে। তাদের সরব উপস্থিতিতে প্রায়শই ছোট্ট ক্যাম্পাসটি জীবনের আভা নিয়ে কোলাহল পূর্ণ হয়ে ওঠে। নানামুখী সহশিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত সকল সক্রিয় ছাত্রসংগঠন সমূহের নাম নিম্নে তুলে ধরা হলো:
• বাঁধন (স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন), বুটেক্স শাখা
• আর্টেক্স
• একাত্তর সাংস্কৃতিক সংঘ
• ডিবেটিং ক্লাব
• ফিল্ম সোসাইটি
• সাংবাদিক সমিতি
• প্রথম আলো বন্ধুসভা, বুটেক্স শাখা
• বিজ্ঞান ক্লাব
• পেশা ক্লাব
• ব্যবসা ক্লাব
• সুহৃদ সমাবেশ
• পথিক বুটেক্স
• এক্স-ক্যা বুটেক্স
• বাউলিয়ানা
• ফটোগ্রাফি সংঘ
• ইলেকট্রনিক্স ক্লাব
• গেইমার্স মেইজ
• তরু, বুটেক্স শাখা
• সাহিত্য সংসদ
• রোবটিক্স ক্লাব
• স্পিনার্স ক্লাব
• আইটি সোসাইটি
• ক্যামিক্যাল ক্লাব
• ভ্রমণকারী সংঘ
• ফ্যাশনোভেশন
• পরিবেশ ক্লাব
• ইয়ুথ এগেইন্স্ট হাঙ্গার, বুটেক্স শাখা
• মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ

আবাসন ব্যবস্থা

শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য বুটেক্সে সর্বমোট চারটি আবাসিক হল রয়েছে: ছেলেদের জন্য রয়েছে তিনটি হল এবং মেয়েদের জন্য একটি। ‘শহীদ আযিয হল’, ‘জি, এম, এ, জি, ওসমানী হল’ এবং ‘সৈয়দ নজরুল ইসলাম হল’ ছেলেদের জন্য; আর মেয়েদের জন্য রয়েছে ‘শেখ হাসিনা হল’৷ ‘সুবাহান আলি হল’ নামে নতুন আরো একটি হল তৈরির পরিকল্পনা সর্বশেষ হাতে নেওয়া হয়েছে।
তথ্যসংগ্রহ: উইকিপিডিয়া
শেয়ার করুন

1 thought on “বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় | বুটেক্স

Comments are closed.