আমাদের গার্মেন্ট ও টেক্সটাইল শিল্পের নতুন প্রজন্মের তরুণরা ও এ শিল্পের মালিকরা গত ১৫-২০ বছরে গার্মেন্ট ও টেক্সটাইল শিল্প কে এক নতুন রূপে সাজিয়েছে। বিশ্বে তুলে ধরেছেন “মেড ইন বাংলাদেশ” ট্যাগ।
অনেক ভাগ্যবান আমাদের গার্মেন্ট ও টেক্সটাইল শিল্পের ২য় প্রজন্মের সন্তানেরা যারা সঠিক দিকনির্দেশনা পেয়েছেন। এবং সাধুবাদ জানাই তাদের দেশপ্রেমের প্রতি। তাদের অনেকেই বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে বিদেশে না থেকে দেশে ফিরে পরিবারের ব্যবসার শক্ত ভাবে হাল ধরেছেন। সেই সাথে তারা তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করেই এখন সফল ব্যবসায়ী।
২০০৬-২০০৭ সালের এর পর এক দল মেধাবী চাকরি জীবনে সফলতার গণ্ডি পেরিয়ে গার্মেন্ট শিল্পের সাথে জড়িত হয়ে, কঠিন পরিশ্রম করে সফলতা অর্জন করেছেন। এবং এখনও কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের প্রতি রইল শ্রদ্ধা।
আমি মহাসাগরের একটি ছোট নৌকা, সীমিত জ্ঞানের। আমার চোখে দেখা জীবনের ব্যর্থ ও সফলতার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে যখন সু্যোগ পাই নিজের মতামত তুলে ধরি। কারণ এ শিল্প আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে, আবার রাতারাতি অনেক কিছু হারাতে হয়েছে। জীবনে সফলতার চাইতে আমার ব্যর্থতা বেশি- এটি বলতে আমি লজ্জাবোদ করি না। কারণ, হয়তো সেই যোগ্যতা আমার নেই বা ছিল না।
২০০৯ সাল পর্যন্ত ৩০ কোটি রপ্তানি করতে সক্ষম হয়েছিলাম। এরপর ২০০৬ সালে ১০লক্ষ ডলারের ক্রয় আদেশ বাতিল হয়ে যায়। কারণ বায়ার ব্যাংক দোওলিয়া হয়ে গেছে, বাকি সব ইতিহাস।
আমি বাবার সাথে যুক্ত হয়েছিলাম ১৯৯৪ সালে। ১৯৯৮ সালে বাবার হার্ট অ্যাটাক ও আমাদের বাবার পরে জানাব মাইনজুদ্দীন তিনি রিয়াজ গার্মেন্টসে ১৯৬০ সাল থেকে বাবার সাথে যুক্ত।
রোড এক্সিডেন্টে মারাত্মক আহত হওয়ার পরে তারা দুজন ই ব্যবসা থেকে ছিটকে পড়েন। প্রায় ৩-৪ বছর তখন আমাদের দিকনির্দেশনা প্রদান করা দুটি মাথাই হরাতে হয়। তারা দুজন ই আর স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরতেই পারে নি। সেই থেকে এখন পর্যন্ত অনেক সংগ্রাম করেছি যাচ্ছি।
পরিবারের উপর দিয়েও অনেক ব্যথা বয়ে গেছে। বাবার দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার উনি অসুস্থ অবস্থায় থাকার পর ২০০৫ সালে মারা যায়। মাও কিডনি রোগ এ আক্রান্ত ছিলেন। ২০১৮ তিনিও মারা যান। এর মধ্যে আমার এক ভাই মারা গেছেন ২০১২ সালে। আর এক ভাই মারা গেছেন ২০২৪ সালে, জানাব মাইজুউদীন ক্যান্সার এ আক্রান্ত হয়ে।
আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ পাক আমাকে সুস্থ রেখেছেন। আমাকেও করোনায় অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে। সে কথা গুলো নাই বললাম।
আমাদের আরএমজি শুরু করার সময় আমরা কোন দিক নির্দেশনা বা পরিকল্পনা পাইনি। তখন ১৯৭৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এ শিল্প বিভিন্ন বাধার উপর দিয়ে গেছে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতি হয় অনেক। হরতাল, অবরোধসহ নানা ধরনের বিদেশী চাপেও পিছিয়ে পরে এ শিল্প। দক্ষ জনশক্তি আভাব, যোগাযোগ ব্যবস্থা সব কিছুই ছিল খুবই কঠিন। আমরা অনেক বাধা থেকে ধাপে ধাপে শিখেছি এবং সম্পদ, অর্থ, শক্তি এবং অনেক ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়ন সঠিক ছিলো না। নানা কারনে জীবনে অনেক কিছু হারাতে হয়েছে। এখনও সংগ্রাম করে যাচ্ছি।
যখন আমি দেখি আমাদের তরুণ প্রজন্মের মালিকরা ভালো করছেন এবং তারা খুব মেধাবী এবং সঠিক দিকনির্দেশনা পেয়েছেন। অনেকেই বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে এসেছে দারুন ভালো ভাবে হাল ধরেছেন। নতুন প্রজন্ম যা পেয়েছে বা পাচ্ছে তা আমরা অর্জন করতে পারিনি।
কারণ আমাদের এক প্রজন্ম অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন এ শিল্পের মালিকরা। তারা হয়তো ব্যর্থ, মানুষ এর চোখে। কিন্তু যা দিয়ে গেছেন অনেক কিছুই ঠিক যেন হারিয়ে গেছে, তাজ মহলের মাটির নিচের ইটের মতো। যাদের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে তাজমহল আজকে তার ফল ভোগ করছেন নতুন প্রজন্মের গার্মেন্টস সেক্টর সেকথা আমি বলছি না। তাদের সকলেরও পরিশ্রম আছে এবং তারা তাদের মানও রেখেছেন।
সাড়া বিশ্বে এখন তাদের সবচাইতে বড় সফলতা অর্জন হল সবুজ কারখানায়। এটি তারা শুধু আর্থিক সুবিধার জন্য বিনিয়োগ করেনি, বরং পরিবেশকে দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করতে।
গার্মেন্ট ও টেক্সটাইল সেক্টরের সবুজায়ন দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে এবং আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা এবং ব্র্যান্ডের আস্থা বাড়িয়েছে। এটি কঠিন সময়েও প্রচুর ব্যবসা নিয়ে এসেছে। এটাই আমাদের নতুন প্রজন্মের বিরাট সফলতা। আগামী প্রজন্মের জন্য শক্ত অবস্থান তৈরি করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা।
এ শিল্পে সব সময় চ্যালেঞ্জে থাকবেই। আপনাদের নেতৃত্বে একটি সুন্দর বিজিএমইএ ও দেশকে একটি সুন্দর শিল্প উপহার দিতে পেরেছে সেটিই অনেক কিছু। এগিয়ে যাবে গার্মেন্ট শিল্পে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ সাবার জন্য রইল শুভ কামনা রইল।
সালাউদ্দিন/হেড অফ অপারেশন/বুনন